বাংলার ঐতিহাসিক খেলঃ
হাডুডু খেলাঃ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হাডুডু খেলার পোশাকি নাম কাবাডি। ... পুরো দক্ষিণ এশিয়াতে কাবাডি প্রচলিত থাকলেও এর উৎপত্তি স্থল পাঞ্জাব। কাবাডির উৎপত্তি সম্পর্কে আরেকটি মত হচ্ছে, মহাভারতে বর্ণিত অভিমন্যু কর্ত্তৃক কৌরব সৈন্যদের চক্রব্যুহ ভেদ করার ব্যর্থ চেষ্টার ঘটনা থেকে ধারণা নিয়ে এ খেলার সৃষ্টি হয়।
নিয়ম কানুনঃ
১ নং নিয়ম: খেলা শুরুর আগে দু’দলের অধিনায়কের উপস্থিতিতে রেফারি কয়েন দ্বারা টস করবেন। টস জয়ী অধিনায়ক কোর্ট পছন্দ বা বিপক্ষের কোর্টে রেইড করার যে কোন একটিবেছে নেবেন। খেলার দ্বিতীয়ার্ধে কোর্ট বদল হবে এবং যে দল প্রথমে রেইড করেনি তারা রেইড করার সুযোগ পাবে। প্রথমার্থে খেলা শেষে উভয় দলের যে একজন খেলোয়াড় বেঁচেছিল কেবল তারাই খেলায় অংশ নেবে। অর্থাৎ যারা আউট হয়ে সিটিং ব্লকে বসেছিল তারা আউট খেলোয়াড় হিসেবে বসে থাকবে।
২ নং নিয়ম: কোন খেলোয়াড় মাঠের বাউন্ডারির বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে তাকে ’আউট’ বলে ধরা হবে। কিন্তু ষ্ট্রগলের সময় কোর্টেও বাইরের ভূমি স্পর্শ করলেও যদি তার শরীরের কোন অংশ সরাসরি সীমানার মধ্যে অবস্থিত কোন খেলোয়াড়কে বা ভূমি স্পর্শ করে তবে তিনি আউট হবেন না।
৩ নং নিয়ম: খেলা চলাকালে কোন এ্যান্ট্রি সীমানার বইরে চলে গেলে তিনি আউট হবেন। রেফারি বা আম্পায়ার তাকে তখনি কোর্টের বাইরে যেতে নির্দেশ দেবেন এবং জোরে তার নম্বর উচ্চারণ করে তাকে আউট ঘোষণা করবেন। তখন রেইড চলতে থাকলে এজন্য তিনি কোন বাশিঁ বাজাবেন না।
৪ নং নিয়ম: রেইড চলাকালে যদি কোন এ্যান্ট্রির শরীরের কোন অংশ কোর্টের বাইরের ভূমি স্পর্শ করে বা বাইরে চলে যায় এবং তিনি রেইডারকে ধরে ফেলেন তবে রেইডার আউট হবেন না। কোর্টের বাইরে চলে যাবার ফলে ঐ এ্যান্ট্রি আউট হবেন।
৫ নং নিয়ম: ষ্ট্রাগল শুরু হলে উভয় দিকের লবি খেলার মাঠের অন্তর্ভুক্ত অংশ হিসেবে গণ্য হবে। ষ্ট্রাগল শেষ হবার পর ষ্ট্রাগলে জড়িত খেলোয়াড়গণ নিজের কোর্টে প্রবেশের জন্য লবি ব্যবহার করতে পারেন।
৬ নং নিয়ম: রেইডার ’কাবাডি’ শব্দ জোরে উচ্চারণ করে ক্যান্ট দেবেন। যদি কাবাডি শব্দ উচ্চারণ না করে ক্যান্ট বা ডাক দেন তবে রেফারি বা আম্পায়ার তাকে নিজেরকোর্টে পাঠিয়ে সতর্ক করে দেবেন এবং বিপক্ষকে রেইড করার সুযোগ দেবেন। এমতাবস্থায় ফেরৎ যাওয়া রেইডারকে এ্যান্ট্রি দল তাড়া করতে পারবে না।
৭ নং নিয়ম: রেইডার বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার আগেই ক্যান্ট বা ডাক আরম্ভ করবেন। যদি ক্যান্ট বিলম্বে শুরু করে তবে রেফারি বা আম্পায়ার রেইডারকে নিজ কোর্টে ফেরৎ পাঠাবেন এবং সতর্ক করে দেবেন। এর ফলে বিপক্ষকে রেইড করার সুযোগ দেয়া হবে। এ অবস্থায়ও বিপক্ষ দল রেইডারকে তাড়া করতে পারবে না।
নোট: রেইডার যদি দেরিতে ক্যান্ট বা ডাক শুরু করে এবং কোন এ্যান্ট্রিকে স্পর্শ করে তাহলেও এ্যান্ট্রি আউট হবে না।
৮ নং নিয়ম: কোন রেইডারকে সতর্ক করে দেয়ার পরও যদি তিনি উল্লেখিত ৬ ও ৮ নং নিয়ম ভঙ্গ করেন তবে রেফারি বা আম্পায়ার বিপক্ষকে একটি পয়েন্ট দেবেন। তবে আইন অমান্যকারী রেইডার আউট হবেন না।
৯ নং নিয়ম: রেইডার বিপক্ষের কোর্ট পরপর তিনবার রেইড করবেন। পরপর তিনবার রেইড করার পরও যদি রেইডার কোন পয়েন্ট লাভ করতে না পারেন তবে বিপক্ষ একটি পয়েন্ট পাবে। ব্যার্থ রেইডের জন্য আম্পায়ার এই পয়েন্ট ঘোষনা করবেন এবং স্কোরশীটে চিহ্ন দিয়ে ধারাবাহিক ফলাফল রক্ষা করবেন। লোনা, বিরতির পর বা অতিরিক্ত সময়ের খেলায় এই ব্যর্থ রেইড গণ্য হবে না।
নোট: প্রত্যেক আম্পায়ার তর ডান দিকের কোর্টে অংশগ্রহণকারী খেলোযারদের এই নিস্ফল রেইড গুনবেন। দু’বার ব্যর্থ রেইড হয়ে গেলে তৃতীয়বার রেইড শুরুর আগেই আম্পায়ার তৃতীয় ও শেষ রেইড করার মধ্যে যদি একবার পয়েন্ট অর্জিত হয় তবে পুনরায় নতুন করে নিস্ফল গোনা শুরু হবে।
১০ নং নিয়ম: একজন রেইডার নিরাপদে কোর্টে ফেরার পর অথবা বিপক্ষের কোর্টে ধরা পড়ে আউট হলে বিপক্ষ দল সেকেন্ডের মধ্যে রেইড করবে। এভাবে খেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রেইড চলতে থাকবে।
নোট: রেফারি ও আম্পায়ার ৫ সেকেন্ডের বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
১১ নং নিয়ম: যদি কোন রেইডার এ্যান্ট্রি দ্বারা ধরা পড়ে ষ্ট্রাগল করার পর নিজের কোর্টে নিরাপদে ফিরে আসতে পারে তবে বিপক্ষ দল তাড়া করতে পারবে না।
নোট: যদি কোন রেইডার কোন এ্যান্ট্রিকে ছুঁয়ে নিজের কোর্টে ফিরে আসে তবে তাকে তাড়া করা যাবে না।
১২ নং নিয়ম: বিপক্ষের কোর্টে একসাথে একজন রেইডার রেইড করবেন। কখনোই একজনের অধিক হবে না। যদি একাধিক রেইডার একসাথে রেইড করে তবে রেফারি তাদের সকলকে নিজের কোর্র্টে ফেরৎ পাঠাবেন এবং এ কারণে তাদের রেইড কারা সুযোগ বাতিল করে বিপক্ষকে রেইড করার সুযোগ দেবেন। এ অবস্থায় রেইডারগণ কোন এ্যান্ট্রিকে ছুঁয়ে দিলে তা কার্যকরী হবে না। এ সময় রেইডারকে তাড়া করা যাবে না।
১৩ নং নিয়ম: একসাথে একাধিক রেইডার বিপক্ষের কোর্টে হানা দিলে রেফারি বা আম্পায়ার সতর্ক করে দেবেন। সতর্ক করার পরও এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে রেফারি বা আম্পায়ার প্রথম প্রবেশকারী রেইডার ছাড়া বাকি সবাইকে ’আউট’ বলে ঘোষনা করবেন। রেফারি রেইডারদেরকে সতর্ক করবেন।
১৪ নং নিয়ম: বিপক্ষের কোর্টে হানা দেয়ার সময় কোন রেইডার ক্যান্ট বা ডাক বন্ধ করলে তিনি আউট হবেন।
১৫ নং নিয়ম: রেইডার এ্যান্টির কোর্টে ধরা পড়লে এ্যান্টিগণ রেইডারকে অবৈধভাবে (নাক মুখ আটকিয়ে আহত হতে পারে এমন কৌশল অবলম্বন করে অথবা অন্যভাবে) আটকাতে পারবে না। এমন করলে রেইডার আউট হবে না বরং এ্যান্টিকে সতর্ক করে দেবেন।
১৬ নং নিয়ম: কোন রেইডার কোন এ্যান্টিকে অথবা কোন এ্যান্টি কোন রেইডারকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিয়ে কোর্টেও বাইরে ফেলে দিতে পারবে না। এমনি করলে রেফারি বা আম্পায়ার উক্ত খেলোয়াড়কে ’আউট’ ঘোষনা করবেন।
নোট: এ ব্যাপরে রেফারি বা আম্পায়ার যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করবেন। ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত না অনিচ্ছাকৃত তা লক্ষ্য করতে হবে।
১৭ নং নিয়ম: রেইডারের সফল হানা শেষে মধ্য রেখা পার হয়ে নিজের কোর্টে না ফেরা পর্যন্ত যদি কোন এ্যান্টি রেইডারের কোর্টে হানা দেয়ার জন্য মধ্য রেখা পার হয়ে বিপক্ষের কোর্টের ভূমি স্পর্শ করেন তবে তিনি আউট হন এবং তিনি যদি কোন রাইডারকে নিজের কোর্টে ধরে রাখতে সাহায্য করেন বা ধরেন তবে সেই রেইডার আউট হবেন না বরং যে এ্যান্ট্রি রেইডারের কোর্ট স্পর্শ করবেন তিনি আউট হবেন।
১৮ নং নিয়ম: নিজের পালা ছাড়া কোন রেইডার রেইডার করতে গেলে রেফারি তাকে ফেরৎ পাঠাবেন এবং সতর্ক করে দেবেন। রেইডার পক্ষ একবার সতর্কিত হবার পরও যদি ইচ্ছাকৃত দ্বিতীয়বার এ রকম অপরাধ করে তবে রেফারি বিপক্ষ দলকে একটি পয়েন্ট দিতে পারেন।
নোট: এই পয়েন্টের ফলে বিপক্ষের কোন আউট খেলোয়াড় ইন হবে না।
১৯ নং নিয়ম: একটি দল যখন বিপক্ষ দলের সব খেলোয়ড়কে আউট করতে পারবে তখন একটি লোনা পাবে। এই লোনার দুই পয়েন্ট অতিরিক্ত হিসেবে ঐ দলের মোট পয়েন্টের সাথে যুক্ত হবে। লোনার পর পুনরায় খেলা শুরু হবে এবং সকল খেলোয়াড় ১০ সেকেন্ডের মধ্যে কোর্টে প্রবেশ করবে। যে দল কোর্টে প্রবেশ করতে দেরি করবে রেফারি তার বিপক্ষ দলকে একটি পয়েন্ট দান করবেন। এরপরও কোর্টে আসতে দেরি করলে রেফারি প্রতি ৫ মিনিট অন্তর বিপক্ষ দলকে একটি করে পয়েন্ট দিতে থাকবেন খেলার শেষ সময় পর্যন্ত।
২০ নং নিয়ম: রেইডারের বিপক্ষ কোর্টে বিপজ্জনকভাবে খেলা বা নিজ দলের নির্দেশ মোতাবেক খেলার জন্য রেফারি রেইডারকে সকর্ত করে দেবেন। এর পুনরাবৃত্তি ঘটলে বিপক্ষকে একটি পয়েন্ট প্রদান করবেন।
নোট: ডবপক্ষ কোর্টে রেইডার হানা দেবার সময় শুধুমাত্র এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
২১ নং নিয়ম: একজন রেইডারের শরীর বা ধর ছাড়া অন্য কোথাও ধরা যাবে না। এই নিয়মের ব্যাতিক্রম যিনি করবেন তিনি আউট হবেন। রেইডারকে ইচ্ছাকৃত বা ন্যায়ভাবে ধরা না হয় তবে আউট হবেন না।
নোট: কোন রেইডারের কাপড় বা চুল ধরে রাখলে তিনি আউট হবেন না। পক্ষান্তরে যে এ্যান্টি কাপড় বা চুল ধরবে তিনি আউট হবেন।
২২ নং নিয়ম: খেলা চলাকালে কোন পক্ষের একজন বা দুইজন খেলোয়াড় অবশিষ্ট থাকে এবং অধিনায়ক যদি তাদেরকে আউট ঘোষণা করতে চান এবং পুরো দলকে কোর্টে নামাতে চান তবে বিপক্ষ দল আউট ঘোষণাকৃত খেলোয়াড়দের পয়েন্টসহ একটি লোনা পাবে।
নোট: কেবলমাত্র অধিনায়ক এ ঘোষণা দিয়ে সম্পূর্ণ দল মাঠে নামাতে পারেন।
২৩ নং নিয়ম: খেলোয়াড়গণ যে সিরিয়াল অনুসারে আউট হবে আবার সেই সিরিয়াল অনুসারে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের আউট হবার পরিবর্তে কোর্টে প্রবেশ করবে।
নোট: আউট হওয়া এবং পুনরায় বেঁচে যাওয়া সিরিয়াল অনুসারে হবে। সহকারী স্কোরার এ বিষয় লক্ষ রাখবেন এবং স্কোরশীটে আউট হওয়া বেঁচে যাওয়া খেলোয়াড়দের হিসাব রাখবেন।